মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৬

আমস্টারডামে ২৪ ঘণ্টা

মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়ামে আইনস্টাইনের মোমোর মূর্তির সাথে।
বেলজিয়াম থেকে জার্মানি যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘেন্ট রেল স্টেশনে গেলাম টিকেট করতে। কিন্তু হঠাৎ মাথায় কি একটা ভূত চাপলো টিকেট ক'রে ফেললাম আমস্টারডাম-এর। ঘেন্ট শহর থেকে আমস্টারডাম দূরত্ব কম, তদুপরি আমি কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম দিগ্বিদিক। ফলত যখন যেদিকে মন চায় সেদিকে ছুটে যায়।

যাই হোক আমস্টারডাম এসে যখন পৌঁছালাম তখন ঘড়ির কাঁটা রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। সারা শহরে মানুষের অভাবনীয় ভীড়। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। ট্রেনে আমার পাশে বসা এক ডাচ এর সাথে কথা হয়েছিল। সে বলেছিলে উইকএন্ডে এই শহর পর্যটক অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। আমি শুক্রবার রাতে এসে পৌঁছেছি এখানে, বুঝলাম কেন এত মানুষ চারপাশে। ভয় পেয়ে গেলাম আবাসন সংকট নিয়ে। হোস্টেলে সিট না পেলে কপালে খারাবি আছে। কয়েকটা হোস্টেল ঘুরার পর অবশেষে একটা হোস্টেলে একটা সিট পেলাম শুধু এক রাতের জন্য। মানে কাল সকালে সেটা ছেড়ে দিতে হবে। ভাড়াও গুনতে হলো বেশ বেশি। তদুপরি এটা একটা কমন রুম, ছয় জনের মত শোয়ার ব্যবস্থা। বাঙ্কার সিস্টেম। আমার বাঙ্কারের নিচে দেখলাম দুই পাশে দুই জার্মান মেয়ে শুয়ে আছে। ভেবেছিলাম রাতে একটু হাঁটতে বের হব। ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা এরি মধ্যে আমার অনেক শক্তি শুষে নিয়েছে। খুব সকালে ঘুরতে বের হব ভেবে আপাতত কিছু খেয়ে ঘুমের জগতে নিজেকে সঁপে দেয়াটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবে বলে সিদ্ধান্ত উপনীত হলাম। 
সকালে যখন বের তখন গ্রীষ্মের নরম রোদ আমস্টারডাম শহরকে কমলা রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। এমনিতেই চারপাশে কমলা রঙের পোশাক পড়া মানুষের ছড়াছড়ি। এক অফুরন্ত উচ্ছাস আর উৎসবের আবহ চারপাশে। দেখে মন ভালো হয়ে গেল খুব। আজ সারাদিন এই শহরে ঘুরে বেড়াব, এই আনন্দ ও উল্লাসে আমিও হব ক্ষুদ্র অংশীদার, আমার উপস্থিতি হয়তো কোনো প্রভাবই ফেলবে না কোথাও, কিন্তু তথাপি একবারে তাৎপর্যহীন ভাবার মত কোনো কিছু মনের মধ্যে আসতে দিলাম না। হণ্টন দিয়ে শুরু করলাম আমার আমস্টারডাম দর্শন।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন