অবশেষে সমর্থ হলাম একটা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মালিক হ'তে। তবে যে-পরিমাণ কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছিল তা ভাবলে এখনো গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়। তবে এত কষ্ট হতো না, যদি দুই নাম্বারি করে ঘুষ দিয়ে এই লাইসেন্স নেয়ার চেষ্টা করতাম। শুরু থেকে একটা জেদ কাজ করছিল কোনো ঘুষ না দিয়ে লাইসেন্স নেব। দেখে কোন ব্যাটা আমাকে আটকায়।
যেভাবে শুরুঃ
বিদেশ যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা থেকে আমি সস্ত্রীক ড্রাইভিং শেখার চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। পত্রিকা আর অনলাইনে ভালো একটা ড্রাইভিং স্কুলের সন্ধান করতে থাকি। ৪ টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক বাছাইয়ে রেখে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করি; কোর্সের ধরন, সময়-কাল, টাকা সব বিবেচনায় রাখি।
শেষ পর্যন্ত ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল-কে তালিকার শীর্ষে রাখলাম। একদিন সরেজমিনে দেখে আসলাম। টাকা সবার থেকে বেশি নিলেও মনে হল এরাই প্রফেশনালিজম এর ব্যাপারটাকে আত্মস্থ করতে পেরেছে, এবং ভালো কিছু করার একটা চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তো একদিন ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ ক'রে শুরু করে দিলাম হাতে-কলমে ড্রাইভিং শিক্ষা।
শেখায় আছে আনন্দঃ
বেশ আগ্রহ নিয়ে ক্লাস শুরু করলাম। প্রথমে থিওরোটিক্যাল দিয়ে শুরু। আর্মির (ইএমই কোর) এক প্রাক্তন জেসিও উক্ত কোর্সের ক্লাস নিলেন। খুব ভালো ক্লাস নিয়েছেন বলা যাবে না, তবে যেহেতু বিষয়টা নতুন, একটা অদ্ভুত আগ্রহ ও উদ্দীপনা কাজ করছিল। তার উপর ভদ্রলোক যথেষ্ট অভিজ্ঞ লোক, কাজেই ক্লাস যাতে বেশি বোরিং না হয়ে যায় সেদিকেও নজর রেখেছিলন। মোটামুটি ভালো একটা ভালো অনুভূতি নিয়ে ক্লাস শেষ বের হলাম। কিন্তু কত অজানা জিনিসে ভ'রে আছে পৃথিবী ভাবতেই অবাক লাগে।
আমি যখন শিক্ষানবীশঃ
প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে গিয়ে দেখি বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। আধাঘণ্টার গাড়ি চালনা মনে হল ৫ মিনিটে শেষ হ'য়ে গেল। মোটামুটি চালালাম। যত সহজ ভেবেছিলাম, তত সহজ না। গাড়ি কোনোভাবেই কথা শুনতে চায় না, এক্সিলেটরে চাপটা কোনোভাবেই পরিমাণ মত হচ্ছিল না। একবার বেশি চাপ পড়ে আর আমি রাস্তার পাশে খানাখন্দে পড়ে যাই, আর একটু মৃদু চাপ দিলে গাড়ি দেখি নড়ার নাম করে না। ট্রেইনার তো রীতিমত বিরক্ত। তবে স্পীড দিতে বললে সেটা খুব ভালো পারতাম, যদিও পড়ে ব্রেক দিতে বললে সেটা খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়ে যেত। আমার বৌ আবার আসতে চালাতে পারত, এবং কন্ট্রোলিং-টা বেশ ভালই ছিল। যদিও স্পীড তুলতে খুব ভয় পেত এবং যেটার জন্য ট্রেইনার বিরক্ত হত! তবে ব্রেক আর এক্সিলেটর এ যাওয়া-আসাটা ও বেশ দ্রুতই করতে পারত। যেটা করতে গিয়ে আমার প্রায়ই ভুল হয়ে যেত। যাইহোক ভালো-মন্দ মিলিয়ে আমাদের ড্রাইভিং শিক্ষা আনন্দ ও ভালো লাগার মধ্য দিয়ে ছলছিল।
আমি যখন ড্রাইভারঃ
যখন আমাদের সর্বমোট ৩০ টি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের ২০ টির বেশি ক্লাস শেষ তখনও দেখলাম আমাদের পার্কিং এ বেশ সমস্যা হচ্ছে। বাহিরের রাস্তায় চালানো কিছুটা পারদর্শিতা এসেছে যদিও ভয়টা কিছুতেই ছাড়ছিল না।
দুই ধরনের পার্কিং শিক্ষানবীশদের শিখতে হয় একটা হলো এল পার্কিং আর একটা হলো জিগজ্যাগ পার্কিং। এছাড়া র্যাম্প টেস্ট ও রোড টেস্ট এর ব্যবহারিক পরীক্ষায় কিন্তু ইদানিং এ-পরীক্ষা আর নেয়া হয় না ব'লে শুনেছি। যাইহোক, জিগজ্যাগ আর এল পার্কিং-এ সামনের দিকে যাওয়াটা সহজেই পারতাম, কিন্তু যেই রিভার্স দিয়ে পেছনে যেতে বলতো তখন আমাদের দুর্দশা আর দেখে কে! বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও বুঝলাম না এটা আয়ত্বে আনতে আর জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে ট্রেইনারদের ব্যাখ্যা বা কৌশলটা কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না, মনে হচ্ছিল ওনারা আরো কমপ্লেক্স করে দিচ্ছেন। এভাবেই চলছিল বেশ কয়েকটি ক্লাস। রিভার্সে জিগজ্যাগ টেস্টটা আয়ত্বে আসতে চাচ্ছিল না কিছুতেই, কিন্তু এল পার্কিং-টা মনে হচ্ছিল বেশ সহজ। খবর নিয়ে জানলাম বি আর টি এ -তে ইদানিং শুধু এল পার্কিং এর পরীক্ষা নেয়া হয় প্র্যাকটিক্যাল পার্ট-এ। শেষের চার/পাঁচ-টা ক্লাস আমরা শুধু এল পার্কিং-ই করলাম। যেই-ভাবেই হোক ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে। ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স নিতে মন কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিল না। নতুন উদ্যমে অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে অনুশীলন করতে থাকলাম। লিখিত পরীক্ষা বেশ সহজ। কিছু গৎবাঁধা জিনিস শিখলেই চ'লে। তদুপরি পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হয় সেটা আগে থেকে জানা যায়। পুরনো প্রশ্নপত্র দেখে নিলে পাশ করাটা নিশ্চিত। আর মৌখিক পরীক্ষাও সহজ, তবে সাইনগুলো ভালো ক'রে আয়ত্ব করতে না পারলে ফেল করার সমূহ সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সমস্যাটা ব্যবহারিক পরীক্ষাতে। ১৫/২০ বছরের অভিজ্ঞ ড্রাইভাররা অবলীলায় হাসতে হাসতে ফেল ক'রে ফেলেন!
পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ
যদিও কথা ছিল সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে কোর্স শেষ ক'রে পরীক্ষায় বসবো, কিন্তু কিসের কী! ক্লাস সব শেষ করতে আমরা সহজেই পারতাম কিন্তু পরীক্ষার তারিখ ছাড়া তা হবে বোকামি। সব ভুলে ব'সে থাকতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলে ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও পাশ করা কঠিন কেননা কোর্সের ক্লাসগুলো পর্যাপ্ত নয় ব'লে আমার ধারনা। কাজেই পরীক্ষার আগে করে আবার ড্রাইভিং ঝালাই করার জন্য কয়েকটা ব্যবহারিক ক্লাস রেখে দেই পরীক্ষার আগের দুই দিন করবো ব'লে। প্রায় ৪ মাস পর আমরা পরীক্ষার ডেট পাই, কিন্তু ঐ দিন পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ পিছিয়ে আরেকটা নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়।
একদিন পরীক্ষার দিনঃ
অবশেষে পরীক্ষার দিন আসলো ঘনিয়ে। আমরা দুজনে মোটামুটি একটা প্রস্তুতি নিলাম। খুব সকালে বি আর টি এ-র নিকেতন শাখায় গেলাম। যদিও ৯ টায় পরীক্ষা শুরুর কথা, কিন্তু দেখলাম অফিস খুলে নি তখন। আমরা প্রমাদ গুনলাম। দারোয়ান কাউকে ভেতরেও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমার সাথে মহিলা আছে দেখে কিছু বললো না। ভেতরে প্রবেশ করে চরম অব্যবস্থাপনা চোখে পড়লো। যে-রকম ভেবেছিলাম তার কিছুই নেই। সাড়ে দশটার দিকে নাম তালিকাভুক্ত করা শুরু করলো। আমাদের পরীক্ষা যেহেতু পিছিয়েছিল কাজেই আমরা সেই দিনের সত্যিকারের পরীক্ষার্থী ছিলাম, আমাদের নামের তালিকাটা ভিন্ন। কাজেই ওটা খুঁজে নাম সই দিতে হলো। খুব হিজিবিজি অবস্থা। ্লাইন ধরতো বললো। কিন্তু লাইন ধরার মত জায়গা নেই। এদিকে পরীক্ষার্থী অনেক। সব দেখে খুব হতাশ হলাম। পরীক্ষার হল দেখে আরো কান্না পাওয়ার মত অবস্থা। সবাই-কে ঘন হারে বসিয়ে দেয়া হলো। ছোট্ট একটা রুম। ৩৫/৪০ জনকে একসাথে বসিয়ে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হল। প্রায় আধা ঘণ্টার মত হল। যে যেভাবে পারছে লিখছে। দেখা-দেখি করা যাচ্ছে খুব সহজে। খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বললো ২ ঘণ্টা পর হবে মৌখিক পরীক্ষা। বসার কোনো জায়গা নেই। কী আর বলবো ঠিকমত দাঁড়াবার জায়গাও নেই। মাঠের মধ্যে অনেকগুলো বি আর টি সি-র দোতলা বাস। ওগুলো-তে গিয়ে বসলাম।
অতঃপর মৌখিক পরীক্ষাঃ
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট পেলাম। পাশ করলাম। বললো নামাজের পরে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে। আবার অপেক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় সহজে উতরে গেলাম। চার-পাঁচটা প্রশ্ন করছে।ঠিকমত বলতে পারলে পাশ। ভুলে করলে চলে যেতে বলছে। অনেকে দেখি ফেল করছে। এবং এই পরীক্ষা ফেল করলে আবার নতুন পরীক্ষার ডেট পড়বে। কিন্তু কিসের কী! লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেও দেখি মৌখিক পরীক্ষা দিছে। বুঝলাম ভেতরে ভেতরে সব সম্ভব। এক দালাল আমার পাশে ঘুর করছে। আমার পাশে মহিলা দেখে সে নিশ্চিত যে আমরা ব্যবহারিকে পাশ করবো না। সে বেশ কনফিডেন্টলি বললো আমরা পাশ করবো না, এটা আমদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ এই পরীক্ষা না কি কেউ পাশ করে না- দুই একজন ছাড়া। আমার রোল নাম্বার চাইল, এডমিট কার্ড দিতে বললো। আমি দিলাম না। দেখতে চাই শেষ পর্যন্ত কী হয়!
ব্যবহারিক পরীক্ষাঃ ফেল যেখানে নিশ্চিতঃ
( চলবে)
যেভাবে শুরুঃ
বিদেশ যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা থেকে আমি সস্ত্রীক ড্রাইভিং শেখার চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। পত্রিকা আর অনলাইনে ভালো একটা ড্রাইভিং স্কুলের সন্ধান করতে থাকি। ৪ টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক বাছাইয়ে রেখে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করি; কোর্সের ধরন, সময়-কাল, টাকা সব বিবেচনায় রাখি।
শেষ পর্যন্ত ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল-কে তালিকার শীর্ষে রাখলাম। একদিন সরেজমিনে দেখে আসলাম। টাকা সবার থেকে বেশি নিলেও মনে হল এরাই প্রফেশনালিজম এর ব্যাপারটাকে আত্মস্থ করতে পেরেছে, এবং ভালো কিছু করার একটা চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তো একদিন ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ ক'রে শুরু করে দিলাম হাতে-কলমে ড্রাইভিং শিক্ষা।
শেখায় আছে আনন্দঃ
বেশ আগ্রহ নিয়ে ক্লাস শুরু করলাম। প্রথমে থিওরোটিক্যাল দিয়ে শুরু। আর্মির (ইএমই কোর) এক প্রাক্তন জেসিও উক্ত কোর্সের ক্লাস নিলেন। খুব ভালো ক্লাস নিয়েছেন বলা যাবে না, তবে যেহেতু বিষয়টা নতুন, একটা অদ্ভুত আগ্রহ ও উদ্দীপনা কাজ করছিল। তার উপর ভদ্রলোক যথেষ্ট অভিজ্ঞ লোক, কাজেই ক্লাস যাতে বেশি বোরিং না হয়ে যায় সেদিকেও নজর রেখেছিলন। মোটামুটি ভালো একটা ভালো অনুভূতি নিয়ে ক্লাস শেষ বের হলাম। কিন্তু কত অজানা জিনিসে ভ'রে আছে পৃথিবী ভাবতেই অবাক লাগে।
আমি যখন শিক্ষানবীশঃ
প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে গিয়ে দেখি বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। আধাঘণ্টার গাড়ি চালনা মনে হল ৫ মিনিটে শেষ হ'য়ে গেল। মোটামুটি চালালাম। যত সহজ ভেবেছিলাম, তত সহজ না। গাড়ি কোনোভাবেই কথা শুনতে চায় না, এক্সিলেটরে চাপটা কোনোভাবেই পরিমাণ মত হচ্ছিল না। একবার বেশি চাপ পড়ে আর আমি রাস্তার পাশে খানাখন্দে পড়ে যাই, আর একটু মৃদু চাপ দিলে গাড়ি দেখি নড়ার নাম করে না। ট্রেইনার তো রীতিমত বিরক্ত। তবে স্পীড দিতে বললে সেটা খুব ভালো পারতাম, যদিও পড়ে ব্রেক দিতে বললে সেটা খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়ে যেত। আমার বৌ আবার আসতে চালাতে পারত, এবং কন্ট্রোলিং-টা বেশ ভালই ছিল। যদিও স্পীড তুলতে খুব ভয় পেত এবং যেটার জন্য ট্রেইনার বিরক্ত হত! তবে ব্রেক আর এক্সিলেটর এ যাওয়া-আসাটা ও বেশ দ্রুতই করতে পারত। যেটা করতে গিয়ে আমার প্রায়ই ভুল হয়ে যেত। যাইহোক ভালো-মন্দ মিলিয়ে আমাদের ড্রাইভিং শিক্ষা আনন্দ ও ভালো লাগার মধ্য দিয়ে ছলছিল।
আমি যখন ড্রাইভারঃ
যখন আমাদের সর্বমোট ৩০ টি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের ২০ টির বেশি ক্লাস শেষ তখনও দেখলাম আমাদের পার্কিং এ বেশ সমস্যা হচ্ছে। বাহিরের রাস্তায় চালানো কিছুটা পারদর্শিতা এসেছে যদিও ভয়টা কিছুতেই ছাড়ছিল না।
দুই ধরনের পার্কিং শিক্ষানবীশদের শিখতে হয় একটা হলো এল পার্কিং আর একটা হলো জিগজ্যাগ পার্কিং। এছাড়া র্যাম্প টেস্ট ও রোড টেস্ট এর ব্যবহারিক পরীক্ষায় কিন্তু ইদানিং এ-পরীক্ষা আর নেয়া হয় না ব'লে শুনেছি। যাইহোক, জিগজ্যাগ আর এল পার্কিং-এ সামনের দিকে যাওয়াটা সহজেই পারতাম, কিন্তু যেই রিভার্স দিয়ে পেছনে যেতে বলতো তখন আমাদের দুর্দশা আর দেখে কে! বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও বুঝলাম না এটা আয়ত্বে আনতে আর জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে ট্রেইনারদের ব্যাখ্যা বা কৌশলটা কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না, মনে হচ্ছিল ওনারা আরো কমপ্লেক্স করে দিচ্ছেন। এভাবেই চলছিল বেশ কয়েকটি ক্লাস। রিভার্সে জিগজ্যাগ টেস্টটা আয়ত্বে আসতে চাচ্ছিল না কিছুতেই, কিন্তু এল পার্কিং-টা মনে হচ্ছিল বেশ সহজ। খবর নিয়ে জানলাম বি আর টি এ -তে ইদানিং শুধু এল পার্কিং এর পরীক্ষা নেয়া হয় প্র্যাকটিক্যাল পার্ট-এ। শেষের চার/পাঁচ-টা ক্লাস আমরা শুধু এল পার্কিং-ই করলাম। যেই-ভাবেই হোক ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে। ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স নিতে মন কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিল না। নতুন উদ্যমে অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে অনুশীলন করতে থাকলাম। লিখিত পরীক্ষা বেশ সহজ। কিছু গৎবাঁধা জিনিস শিখলেই চ'লে। তদুপরি পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হয় সেটা আগে থেকে জানা যায়। পুরনো প্রশ্নপত্র দেখে নিলে পাশ করাটা নিশ্চিত। আর মৌখিক পরীক্ষাও সহজ, তবে সাইনগুলো ভালো ক'রে আয়ত্ব করতে না পারলে ফেল করার সমূহ সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সমস্যাটা ব্যবহারিক পরীক্ষাতে। ১৫/২০ বছরের অভিজ্ঞ ড্রাইভাররা অবলীলায় হাসতে হাসতে ফেল ক'রে ফেলেন!
পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ
যদিও কথা ছিল সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে কোর্স শেষ ক'রে পরীক্ষায় বসবো, কিন্তু কিসের কী! ক্লাস সব শেষ করতে আমরা সহজেই পারতাম কিন্তু পরীক্ষার তারিখ ছাড়া তা হবে বোকামি। সব ভুলে ব'সে থাকতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলে ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও পাশ করা কঠিন কেননা কোর্সের ক্লাসগুলো পর্যাপ্ত নয় ব'লে আমার ধারনা। কাজেই পরীক্ষার আগে করে আবার ড্রাইভিং ঝালাই করার জন্য কয়েকটা ব্যবহারিক ক্লাস রেখে দেই পরীক্ষার আগের দুই দিন করবো ব'লে। প্রায় ৪ মাস পর আমরা পরীক্ষার ডেট পাই, কিন্তু ঐ দিন পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ পিছিয়ে আরেকটা নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়।
একদিন পরীক্ষার দিনঃ
অবশেষে পরীক্ষার দিন আসলো ঘনিয়ে। আমরা দুজনে মোটামুটি একটা প্রস্তুতি নিলাম। খুব সকালে বি আর টি এ-র নিকেতন শাখায় গেলাম। যদিও ৯ টায় পরীক্ষা শুরুর কথা, কিন্তু দেখলাম অফিস খুলে নি তখন। আমরা প্রমাদ গুনলাম। দারোয়ান কাউকে ভেতরেও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমার সাথে মহিলা আছে দেখে কিছু বললো না। ভেতরে প্রবেশ করে চরম অব্যবস্থাপনা চোখে পড়লো। যে-রকম ভেবেছিলাম তার কিছুই নেই। সাড়ে দশটার দিকে নাম তালিকাভুক্ত করা শুরু করলো। আমাদের পরীক্ষা যেহেতু পিছিয়েছিল কাজেই আমরা সেই দিনের সত্যিকারের পরীক্ষার্থী ছিলাম, আমাদের নামের তালিকাটা ভিন্ন। কাজেই ওটা খুঁজে নাম সই দিতে হলো। খুব হিজিবিজি অবস্থা। ্লাইন ধরতো বললো। কিন্তু লাইন ধরার মত জায়গা নেই। এদিকে পরীক্ষার্থী অনেক। সব দেখে খুব হতাশ হলাম। পরীক্ষার হল দেখে আরো কান্না পাওয়ার মত অবস্থা। সবাই-কে ঘন হারে বসিয়ে দেয়া হলো। ছোট্ট একটা রুম। ৩৫/৪০ জনকে একসাথে বসিয়ে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হল। প্রায় আধা ঘণ্টার মত হল। যে যেভাবে পারছে লিখছে। দেখা-দেখি করা যাচ্ছে খুব সহজে। খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বললো ২ ঘণ্টা পর হবে মৌখিক পরীক্ষা। বসার কোনো জায়গা নেই। কী আর বলবো ঠিকমত দাঁড়াবার জায়গাও নেই। মাঠের মধ্যে অনেকগুলো বি আর টি সি-র দোতলা বাস। ওগুলো-তে গিয়ে বসলাম।
অতঃপর মৌখিক পরীক্ষাঃ
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট পেলাম। পাশ করলাম। বললো নামাজের পরে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে। আবার অপেক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় সহজে উতরে গেলাম। চার-পাঁচটা প্রশ্ন করছে।ঠিকমত বলতে পারলে পাশ। ভুলে করলে চলে যেতে বলছে। অনেকে দেখি ফেল করছে। এবং এই পরীক্ষা ফেল করলে আবার নতুন পরীক্ষার ডেট পড়বে। কিন্তু কিসের কী! লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেও দেখি মৌখিক পরীক্ষা দিছে। বুঝলাম ভেতরে ভেতরে সব সম্ভব। এক দালাল আমার পাশে ঘুর করছে। আমার পাশে মহিলা দেখে সে নিশ্চিত যে আমরা ব্যবহারিকে পাশ করবো না। সে বেশ কনফিডেন্টলি বললো আমরা পাশ করবো না, এটা আমদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ এই পরীক্ষা না কি কেউ পাশ করে না- দুই একজন ছাড়া। আমার রোল নাম্বার চাইল, এডমিট কার্ড দিতে বললো। আমি দিলাম না। দেখতে চাই শেষ পর্যন্ত কী হয়!
ব্যবহারিক পরীক্ষাঃ ফেল যেখানে নিশ্চিতঃ
( চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন