বর্ষার
কোনো
এক
দুপুর।
আকাশ
জুড়ে
কালোমেঘ। অতঃপর
বৃষ্টির সঙ্গীত। চারিদিকে ছায়া-ছায়া। আঁধারের আনাগোনা ঘরের
কড়িকাঠে। কাকভেজা হয়ে
আছে
সারা
বাড়ি।
উঠোন
করছে
স্নান
বর্ষার
নবধারা
জলে।
কিন্তু বালক বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে নি।
আগে মরে গেল তার ইন্দ্রিয়গুলো। তারপর পচন ধরলো শরীরে। সে মরে গেল। একাধিক বার ক’রে মরল সে।
***
চতুর্মাত্রিক ব্লগে প্রকাশিত
পৃথিবীর প্রাণে
যোগ
হলো
আরেকটি
কচি
প্রাণ।
সেই
প্রাণের উল্লাস
ধীরে
ধীরে
ছুঁয়ে
যায়
সবকিছুকে।
গাছেরা
ছায়ারা
তাকে
চিনত,
সে
বুঝত
তাদের
ভাষা।
বিকেলের নরম
আলো
মাঝে
মাঝে
তার
সত্ত্বা বা
অস্তিত্ব জিনিসটাকে ভুলিয়ে
দিত।
তার
অনুভূতি হত
সে
যেন
বৃহৎ
প্রকৃতির একটা
ক্ষুদ্র অংশ।
সে
যেন
মানুষ
নয়,
যেন
বা
গাছ
কিংবা
বুনো
ঝোপঝাড়। কিংবা
টুই
টুই
করা
টুনটুনি পাখি।
হয়তোবা
রঙিন
ডানাওয়ালা প্রজাপতি; ঘাস-ফড়িং। কিংবা মাঝে
মাঝে
মনে
হত
সে
কেউ
না।
সে
ছায়া।
শুধুই
ছায়া।
সে
বালককে
তোমরা
চিনবে
না,
তাকে
খুঁজে
পাবে
না
কোথাও।
জঙ্গল
পাড়ায়
সে
হয়ে
যেত
গাছেদের আত্মীয়,
পাখিদের সহচর।
কখনো-সখনো তার পায়ে
গজাত
শেকড়
বাকড়।
তার
ডালপালায় ফাগুন
মাসের
মৃদু
বাতাস
খেলা
করত। প্রতিটা ঋতুকে
সে
অনুভব
করত
খুব।
শীতের
পাতা-ঝরা দেখার জন্য
ব্যয়
করত
শত
শত
মূহুর্ত, কত
দিন
কত
রাত
কোকিলের কুহু
কুহু
ডাকে
কত
বসন্তে
কত
হাজার
বার
যে
আনমনা
হয়েছিল
বালকের
ছোট্ট
মন,
তা
জানে
না
কেউ।
পুকুরের জলে
সূর্যের আলোয়
যে
ঝিকিমিকি তারারা
কথা
বলে,
তাদেরকে সে
বালক
খুঁজে
বেড়িয়েছে দিক
থেকে
দিগন্তে, পৃথিবীর এ
প্রান্ত থেকে
ও
প্রান্ত, কিন্তু
কোথাও
খুঁজে
পায়
নি।
বাছুর
নতুবা
ছাগল-ছানা হারিয়ে কত
দিন
এই
বিষণ্ন
বালক
এ
মাঠ
ও
মাঠ
ঘুরে
বেড়িয়েছি, এ
পাড়ায়
ও
পাড়ায়
মারিয়েছে কত
ঘাস,
তার
চোখের
সম্মুখে কত
আলোকিত
বিকেল
ম্লান
হতে
হতে
সন্ধ্যার আধো
অন্ধকারে বিলীন
হয়েছে,
সেগুলো
আজ
অন্য
জন্মের
স্মৃতি।
আকাশের
অনেক
উঁচুতে
সে
উড়ে
গিয়েছিল অনেকবার, কেউ
দেখে
নি।
রঙিন
সব
ঘুড়ি,
যেগুলোর গায়ে
আছড়ে
পড়ত
অস্তগামী সূর্যের আলো,
সেই
সব
টুকরো
সব
রঙিন
বিহঙ্গের সাথে
সে
উড়ত
দু’হাত দু-পাশে
প্রসারিত করে
দিয়ে।
কেউ
টের
পেত
না।
বর্ষাকালে গাছের
নিচে
চুপটি
মেরে
বসে
থেকে
সে
শরীরে
মাখত
বৃষ্টির গন্ধ।
দেখত
অনেক
দূরে
যে
বৃষ্টির রেখা
ধোঁয়ার
মত
ঝাপসা
হয়ে
যেত
তার
মনকাড়া
রূপ।
যেন
বা
কাগজের
সাদা
পাতা।
তার
মনে
হত
জীবনও
এ-রকম। ধূ ধূ
শুন্যতা। কোনো
অর্থ
নাই।
মাঝে
মাঝে
কান্না
পেত
খুব।
তখন
মনে
হত
নাহ
জীবনের
অর্থ
আছে।
জীবন
খুব
করুণ
ও
বেদনাময়। দুঃখ
ও
হাহাকারে ভরা।
ছিল
দুটি
অনুসন্ধিৎসু চোখ
তার।
আর
কিছু
ছিল
না
উল্লেখ
করার
মত।
সে
সারা
জীবন
শুধু
বেঁচে
থাকতে
চেয়েছিল। আর
কিছু
চায়
নি।
তার
মনে
হয়েছিল
বেঁচে
থাকার
মত
সুন্দর
ভালো
আর
কিছু
হতে
পারে
না।
শুধু
প্রাণবন্ত প্রাণ
চাই
তার।
আর
কিছুর
জন্য
লালায়িত হতে
ইচ্ছে
করত
না।
তবে
প্রাণ
হওয়া
চায়
পরিপূর্ণ। চাইত
সাস্থ্যবান ইন্দ্রিয়। ধান
গাছের
কচি
সবুজ
পাতায়
শ্রাবণের অঝোর
ধারা
কী
যে
হৃদয়
মথিত
করা
দৃশ্যের অবতারণা করে
– এ-সুন্দরতা তার বারবার দেখা
চায়।
পূর্ণিমার রূপালী
আলো
যখন
রাত্রির নিবিড়
কালো
ছায়ার
সাথে
একাকার
হয়ে
যায়
সে
রঙটাকে
তার
ছুঁতে
চাওয়ার
বাসনা
জাগত।
গভীর
রাতে
পুকুরের জলে
ডুব
দিত
চাঁদ,
কিন্তু
লুকোতে
পারত
না
তার
সর্বগ্রাসী রূপ-বৈভব। আশে-পাশের
টুকরো
কয়েক
তুলো
মেঘও
ঘুমজড়ানো চোখে
চাঁদের
পাশে
ঘুর
ঘুর
করত।
এই
সব
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দৃশ্যকাব্যের জন্যই
তার
বেঁচে
থাকতে
ইচ্ছা
করত
ভীষণ।
কিন্তু বালক বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে নি।
আগে মরে গেল তার ইন্দ্রিয়গুলো। তারপর পচন ধরলো শরীরে। সে মরে গেল। একাধিক বার ক’রে মরল সে।
***
চতুর্মাত্রিক ব্লগে প্রকাশিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন