নীল নদের উৎস সন্ধানে
মিশরের
নীল নদ সম্পর্কে অবগত
নেই এমন লোক
খুব বিরল। এক
অভূতপূর্ব সভ্যতা গড়ে
উঠেছিল এই নদীর
তীর ঘেঁষে। সেই
মিশরীয় সভ্যতা আজো
এই পৃথিবীর মানুষের কাছে
এক বিস্ময়। নীল নদ সম্পর্কে আমার
যেটুকু জ্ঞান তার
সবটুকু স্কুলের ছাত্র
থাকা অবস্থায় আহরিত,
তাও ছিল অসম্পূর্ণ বা
বলা যেতে পারে
ভাসা ভাসা।পরীক্ষা পাশের
জন্য পড়েছিলাম; আর
যে পড়াশুনা শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য,
সেটার প্রতি একধরনের বৈরীভাব পৃথিবীর অধিকাংশ ছাত্রের মত
আমারও ছিল! এই
নদীর উৎপত্তি স্থল
যে উগান্ডায় সে
তথ্য জানলাম যেদিন
উগান্ডার মাটিতে আমার
প্রথম পা পড়ল।
উগান্ডায় এসে
নীল নদের উৎস
না দেখে যাওয়া
একটা বড় বোকামি
হবে সাব্যস্ত করলাম।
নীল নদকে মনে
করা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী । এর
আয়তন প্রায় ৬৬৫০
কিমি। এই নদীর
জল হাওয়া পেয়ে
ধন্য সুদান, বুরুন্ডি, কঙ্গো,
তাঞ্জানিয়া, রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া ও
কেনিয়া সহ উল্লিখিত দুটি
দেশ। পৃথিবীর অন্য
কোনো নদী প্রায়
নয়টি দেশের সংস্পর্শে এসেছে
কিনা আমার জানা
নেই।
নীল
নদকে দুই ভাগে
চিহ্নিত করা হয়।
হোয়াইট নাইল ( White Nile) আর অন্য
অংশটির নাম ব্লু
নাইল (Blue Nile)। ব্লু নাইল
শাখাটি বেশি পরিমাণ
পানি ধারন করে
এবং এর দু-কূলের সমতল
ভূমি খুব উর্বর।
অন্য অংশটির বিশেষত্ব এটি
দৈর্ঘে ব্লু নাইলের
চেয়েও এগিয়ে। এই
দুই অংশের মিলন
ঘটেছে সুদানের রাজধানী খার্তুম-এ।
হোয়াইট নাইল-এর
উৎপত্তি মূলত ভিক্টোরিয়া লেক সংলগ্ন
রিপন ফলস যেটি পূর্ব
আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় অবস্থিত। ভিক্টোরিয়া লেকের
উত্তর-সীমানায় রিপন
ফলস-এর অবস্থান। আর
অন্য অংশটির উৎপত্তি স্থল
টানা লেক যেটি আফ্রিকার শিং
ইথিওপিয়ায় অবস্থিত।
নীল
নদের উৎস নিয়ে
অনেক বিভ্রান্তি চলছিল
দীর্ঘদিন ধরে। বৃটিশ
ভূ-তত্ত্ববিদ জন হানিং স্পিকি ১৮৬২ সনে
উগান্ডার জিঞ্জায় অবস্থিত রিপন
ফলসকে নীল নদের
উৎস বলে সাব্যস্ত করেন।
তার এই আবিস্কারকে হ্যানরি মর্টন স্ট্যানলি সহ অনেকে
স্বীকৃতি দেন। এ
উৎস থেকে উদগীরিত পানি
সুদান ও মিশরের
প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার পথ
পরিক্রম করে ভূ-মধ্য সাগরে
গিয়ে গিয়ে পতিত
হয়। এই প্রবাহের আনুমানিক সময়সীমা ৩
মাস।
একদিন
খুব সকালে ঘুম
থেকে উঠে এন্টেবি বিমান
বন্দরের নিকটবর্তী বাংলা
হাউজ
( কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কর্তব্যরত বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সদস্যরা সাধারণত ছুটিতে কিংবা দেশে আসার সময় এখানে অবস্থান করে) থেকে যাত্রা শুরু করলাম। প্রথম গন্তব্য কাম্পালা। কাম্পালা থেকে আমাদের পরবরর্তী গন্তব্য হলো জিঞ্জা। জায়গাগুলোর সাথে আমাদের পরিচয়ের অভাবহেতু একজন পরিচিত ট্যাক্সি ড্রাইভারকে সারাদিনের জন্য ভাড়া করলাম। সে আমাদের বাহক ও গাইড হতে সচ্ছন্দে রাজি হলো।
( কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কর্তব্যরত বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সদস্যরা সাধারণত ছুটিতে কিংবা দেশে আসার সময় এখানে অবস্থান করে) থেকে যাত্রা শুরু করলাম। প্রথম গন্তব্য কাম্পালা। কাম্পালা থেকে আমাদের পরবরর্তী গন্তব্য হলো জিঞ্জা। জায়গাগুলোর সাথে আমাদের পরিচয়ের অভাবহেতু একজন পরিচিত ট্যাক্সি ড্রাইভারকে সারাদিনের জন্য ভাড়া করলাম। সে আমাদের বাহক ও গাইড হতে সচ্ছন্দে রাজি হলো।
কাম্পালার রাস্তায় আগেও
ভ্রমণ করেছিলাম। এন্টেবি থেকে
ট্যাক্সিতে প্রায় ঘণ্টা
চারেকের রাস্তা। আর
কাম্পালা থেকে জিঞ্জার দূরত্ব
৭০ কিলোমিটার। ধরে
নিলাম ঘণ্টা দুয়েক
লাগবে। সারাদিনের খাবার
আর যাবতীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে
নিলাম সাথে।
পাকা সড়ক ধরে আমাদের ট্যাক্সিটি বেশ দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। ছোট ছোট বাজার, গ্রাম কিংবা রাস্তার দু’পাশের প্রাণচঞ্চল লোকালয়গুলো পিছনে ফেলে আমাদের উন্মুখ মন ক্রমশ সামনের দিকে ধাবিত হতে থাকল।
পাকা সড়ক ধরে আমাদের ট্যাক্সিটি বেশ দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। ছোট ছোট বাজার, গ্রাম কিংবা রাস্তার দু’পাশের প্রাণচঞ্চল লোকালয়গুলো পিছনে ফেলে আমাদের উন্মুখ মন ক্রমশ সামনের দিকে ধাবিত হতে থাকল।
যদিও
মন আমাদের চুড়ান্ত গন্তব্য পৌঁছতেই বেশি
উন্মনা তথাপি সড়কের
দু-দিককার প্রকৃতি ও
পথ-চলতি আটপৌরে
জীবনকে গ্রোগাসে গিলতে
লাগলাম। সড়কের দু-পাশের সবুজ
বনানী, চুপটি মেরে
বসে থাকা পাহাড়
আর সে পাহাড়ের গায়ে
লেপ্টে থাকা আলুথালু মেঘ,
আবার কখনো কখনো
বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত, ছোট
ছোট টিলার উপর
গাড় সবুজে ছাওয়া
চা-বাগান এ-সব কিছুই,
টের পেলাম, আমাদেরকে নিবিড়
মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ফেলছে।
বুঝলাম এই ভালোলাগা কখনো
মলিন হবার নয়।
শুরুতেই মহাত্মা গান্ধীর ছবি।
নীল নদের উৎস-মুখে গান্ধীর দেহ-ভস্ম ফেলা
হয়েছিল। তাঁকে সম্মান
জানানোর উদ্দেশ্যে এই
ভাস্কর্য নির্মাণ করা
হয়। শান্তির এই
দূতকে সশ্রদ্ধ সালাম।
গান্ধীজী-র
সমাধি-লিপি
ভাস্কর্যটির ক্লোজ-আপ ছবি।
নীল
নদের উৎস-মুখে
আপনাকে স্বাগতম
পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীর
উৎস-স্থল এই
জলাধার
নীল
আকাশ, স্ফটিক জল
আর নয়ানাভিরাম সবুজ
পাহাড় এখানে পেতেছে
মিতালি।
"এখানে স্নানের আগে
কেউ কেউ করে
থাকে নদীকে প্রণাম"
জলের
সাথে জলের কেলি
এই
সবুজ আর নীলের
সমারোহে কেটে যাক
একটা পরিপূর্ণ জীবন।
এখান
থেকে অনবরত উদগিরীত হচ্ছে
পানি
নদীর
বুকে জেলে নৌকা
নদী
আমায় হাতছানি দিয়ে
ডাকে
সারাটা
দিন জলের সাথে
জলের-ই কথা
হয়
গাছের
নিচের এক টুকরো
সবুজ ছায়ায় মুছে
দেয়া যায় অফুরাণ
ক্লান্তি আর কালিমা।
নদী
এসে কথা বলে
পাথরের কানে কানে
এখানেও
চোখে পড়ল আমাদের
চিরচেনা তাল বৃক্ষ
বি দ্রঃ এই ব্লগটি 'চতুর্মাত্রিক' নামক ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে ব্লগটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই ব্লগে স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়া হয়েছে। সময়ের অভাবে ছবিগুলো আপলোড করা হয় নি। তবে পরবর্তীতে ছবিগুলো আপলোড করব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন