সায়েন্স ফিকশন যদি হয়
মহাবিশ্ব নিয়ে তাহলে সেটার প্রতি আমার মুগ্ধতা আগে থেকেই তৈরি হ'য়ে যাবে! এটা এমন একধরনের মুগ্ধতা, যুক্তিবাদী মন সেখানে বেশি ঝামেলা করবে
না। 'গ্র্যাভেটি' মুভিটি দেখেছিলাম ব্লকবাস্টার, যমুনা ফিউচার পার্কে। মুভিটি খুব বেশি জনপ্রিয়তা
পায় নি, মানে
ইন্টারস্টেলার- এর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। আমি ফিজিক্স কিংবা এস্ট্রোফিজিক্স ভালো বুঝি না, সেই আমার কাছেও অনেক বেশি গাঁজাখুরি মনে
হয়েছে, আরো একটু যত্ন
দিয়ে কাহিনীটি নির্মাণ করা যেত, আরো বিশ্বাসযোগ্য
হতে পারত গল্পটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গল্পটি শিশুতোষ ও অতিমাত্রায় নাটকীয়তায় পর্যবাসিত হয়।
কিন্তু যতক্ষণ মহাশুণ্যে ভাসছিল কৃত্রিম উপগ্রহগুলি, সেগুলো থেকে ছিটকে পড়ছিল নভোচারীরা, ভেসে বেড়াচ্ছিল অন্তহীন
মহাশূণ্যে- ততক্ষণ এক অদ্ভূত শিহরণ বয়ে যাচ্ছিল আমার ভেতর। শুধু ঐ দৃশ্যগুলি যে
অনন্য অসাধারণ মোহময়তা তৈরি করছিল আমার ভেতর, ভালোলাগায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আমাকে তাতেই আমার সন্তুষ্টি। আমার
কোনো খেদ আর তৈরি হয় নি, সময়ের অপচয় মনে হয় নি একটুও।
যাই হোক, ইন্টারস্টেলার-এর কথায় আসা যাক এবার। ইণ্টারস্টেলার মুভির পোস্টার আর এড দেখে লোভ সামলাতে পারি নি। আমি আদতে কিছুই জানতাম না ফিল্মটি সম্পর্কে।
যমুনা-তে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম সস্ত্রীক, ব্লকবাস্টার-এ গিয়ে দেখি ইন্টারস্টেলার মুভিটি চলছে।এই মুভি না দেখে বাসায় ফেরাটা আমার জন্য কষ্টকর হবে বৈকি। ঐ যে বললাম, মহাবিশ্ব সম্পর্কিত সবকিছু আমাকে
আলোড়িত করে। যদিও সবকিছু বোঝার মত মেধা আমার নেই, তদুপরি আর্টসের ছাত্র হিসেবে বেসিক পদার্থবিদ্যার
জ্ঞানও নেই বললে চলে, কাজেই আমার জানার তৃষ্ণাটা অজানায়
শুধু ডানা ঝাপটিয়ে ছটফট করে, আমি যেটুকু পাই, যেটুকু বুঝি সেটুকু-কে আকণ্ঠ পান করি
অত্যন্ত তৃপ্তির সহিত। সেটাতেই আমার আনন্দ, সেটাতেই আমার মোহাচ্ছন্নতা!
পৃথিবী থেকে প্রাণের
অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে, খাদ্য উৎপাদন
অসম্ভব হয়ে পড়েছে পৃথিবী-তে।
অন্য কোথাও, অন্য কোনো
গ্রহে, অন্য কোনে
গ্যালাক্সি-তে একটা বিকল্প 'পৃথিবী'র সন্ধান করতে হবে, সেটার জন্য নাসার একদল মহাকাশ-বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ অক্লান্ত পরিশ্রম ক'রে যাচ্ছে অনেকগুলো বছর ধ'রে। নাসার প্রাক্তন পাইলট কুপার- যে এই মুভির
প্রধান চরিত্র - একটি কৃষি খামার পরিচালনা করছিলেন তার শওশুরসহ। তার ছেলে এবং কন্যা মার্ফিও ছিলেন তার দৈনন্দিন
কর্মের সহযোগী। কন্যা মার্ফি তার ঘরে আধিভৌতিক কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুমান করছিলেন, যেটা তাদের কাছে বিশেষ কোনো বার্তা
পাঠাচ্ছিল এবং সেটার সূত্র
ধরে তারা নাসার একটি গোপন গবেষণাঘারে পৌঁছতে সমর্থ হন।
এভাবে কাহিনী আগাতে
থাকে। কুপার-কে বিস্তারিত বলা হয় নাসা- চলমান কার্যক্রম ও অভিযান সম্পর্কে। কুপারের মত একজন
পাইলট তাদের প্রয়োজন। কুপার যোগ দেয় সে অভিযানে। শুরু হবে শ্বাসরুদ্ধকর মহাকাশযাত্রা।
ড ব্র্যান্ড, কুপারের কলেজ শিক্ষক, যিনি এখন নাসার, বিশেষ করে 'অন্য পৃথিবী' অনুসন্ধানের প্রধান বিজ্ঞানী কুপার-কে
সংক্ষেপে জানালেন যে শনি গ্রহের কাছাকাছি ৪৮ বছর আগে থেকে একটা 'ওয়ার্মহোল' এর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওয়ার্মহোল
একধরনের শর্টকাট পথের ব্যবস্থা করে দেয় যেটা দিয়ে এক গ্যালাক্সি অন্য আরেকটি
গ্যালাক্সি যাত্রা সম্ভব। ওয়ার্মহোল ব্যতিরেকে সেখানে পৌঁছতে আমাদের সৌরজগত
বা মিল্কিওয়ে থেকে লাগবে প্রায় ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। এই ওয়ার্মহোল সেই অবিশ্বাস্য যাত্রা-কে
সম্ভব করে তুলেছে। তদুপরি অন্য কোন গ্যালাক্সি-তে গেলে সেখানে পৃথিবীর মত গ্রহের অস্তিত্ব
আবিষ্কারের সম্ভবনা অপরিসীম এবং
ইতোমধ্যে বার জন নভোচারীর একটি দল সেই অভিযানে অংশ নিয়ে করে পাড়ি দিয়েছে
অজানার উদ্দেশ্যে- যদি মানব সভ্যতাকে তারা প্রতিস্থাপন করতে পারেন সীমাহীন
মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র কোনো প্রান্তে। তারা এরি মধ্যে কিছু আশাব্যঞ্জক ডেটা পাঠিয়েছেন বিশেষ করে
মান, এডমুন্ডস এবং
মিলার নামের নভোচারীরা। গারগান্টুয়া নামের এক
অতিকায় ব্ল্যাকহোলের নিকটবর্তী কিছু গ্রহের ব্যাপারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা
জানিয়েছেন অর্থাৎ এই গ্রহগুলো-তে হয়তো মানুষ প্রজাতির অস্তিত্ব-কে টিকিয়ে রাখা সম্ভবপর হতে
পারে।
ব্রান্ড কুপার-কে
রাজি করাতে সমর্থ হন নতুনতর এই অভিযানে অংশ নিতে, 'এন্ডিউরেন্স' মহাকাশযানের পাইলট
হিসেবে সে এই কাজ ভালোই পারার কথা। তিনজন সহবিজ্ঞানী যাদের একজন হলেন ব্রান্ডের
এর কন্যা আমেলিয়া, অন্য দু-জন ডোয়েইল আর রমিলি; কুপারের সঙ্গে যাত্রা
করবেন দুটি রোবট টারস এবং কেস, তারা সুদূর কোনো গ্যালাক্সি-তে খুঁজে
বেড়াবেন একটি উপযুক্ত গ্রহ যেখানে পৃথিবীর কিছু মানুষ গিয়ে শুরু করবেন
নতুনতর কোনো সভ্যতা। এটা 'প্ল্যান এ' র
অংশ। যদি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়
এ-অভিযাত্রা তাহলে প্ল্যান বি-এর অংশ হিসেবে এন্ডিউরেন্স এর মধ্যে ৫০০০ ভ্রূণ
থাকবে যেগুলো হবে মানবজাতির সর্বশেষ অস্তিত্বের নিদর্শন, সেগুলোর
শেষ পর্যন্ত কোনো একটা গতি করা হবে এবং সেটা তাদের অভিযানের
আরেকটি উদ্দেশ্য। কন্যা মার্ফি-র
মন ভেঙে দিয়ে অবশেষে কুপার এক অনিরুদ্দেশ যাত্রায় সামিল হন।
এরপর একে একে ঘটতে
থাকে নাটকীয় সব ঘটনা। শিহরণ জাগানো সেসব আখ্যান মূলত ব্যাখ্যা করা কঠিন। কারণ অনেকগুলো
বিষয় আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে, ভাসা ভাসা অনুমান
দিয়ে সেসব লিখতে চাচ্ছি না। প্রথমবার অনেক কিছু বুঝি নি, বাসায় আবার সাবটাইটেলসহ মুভিটি দেখি, আমার শুধু মুগ্ধতা বাড়ে। বিশ্লেষণের
মত বুদ্ধির সবিশেষ
অভাব আমার আছে, সেটা আগেই
স্বীকার করে নিয়েছিলাম। তবে শিহরিত হয়েছিলাম মুভিটির প্রতিটি দৃশ্যে দৃশ্যে, আবেগ-আপ্লুত হয়েছিলাম যখন দেখেছিলাম ---- মারা যাচ্ছিল এক অভাবনীয় অতিকায় জলোচ্ছাসে মহাবিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে
এক অদ্ভুত কোনো গ্রহে, মিলারের সেই
গ্রহ যেখানকার একঘণ্টায় পৃথিবীতে পার হয়ে যাচ্ছে সাত সাতটি বছর, এবং মাত্র তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের সেই
যাত্রা শেষে তারা যখন ফিরে আসেন এনডিউরেন্স-এ, রোমিলি এবং পৃথিবী ততক্ষণে তেইশটি বছর অতিক্রান্ত করে
ফেলেছে। বৃদ্ধ রোমিলি-কে দেখে তাদের যে অনুভূতি সেই অনুভূতি আমি প্রায় সম্পূর্ণ অনুভব করেছিলাম!
অসমাপ্ত......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন